এক মাসে অর্ধশত বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন

নির্বাচনী সহিংসতার সঙ্গে মানুষের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতবাড়ি। গত এক মাসে সারাদেশে অর্ধশত বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কারা এ ঘটনা ঘটাচ্ছেÑ তা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা আমাদের সময়কে বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। এতে অনেকে আটক-গ্রেপ্তার হয়েছেন বা হচ্ছেন।গত ২৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কামালের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। আগুন দেখে আবুল কালামের স্ত্রী চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা এসে তা নিয়ন্ত্রণে আনেন। মুরশিদার অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঝাড়গাঁও গ্রামের একটি হিন্দুবাড়ির তিনটি ঘর পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।ক্ষতিগ্রস্ত ছতিশ চন্দ্র বলেন, রাতে কে বা কারা আমাদের খড়িঘরে আগুন দিয়েছে। এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর রাতে একই উপজেলার সিংগিয়া শাহাপাড়া গ্রামের কৃষ্ণ ঘোষের বাড়ির ৮টি ঘরে আগুন দেওয়া হয়। কৃষ্ণ ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, ভোরে বাড়িতে তারা সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে আটটি ঘর, সাতটি ছাগল, ৬০ মণ ধান ও আসবাবপত্র পুড়ে পাঁচ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দীন আলাল মাস্টার এ ঘটনার জন্য ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান লিটনকে দায়ী করেছেন।তবে লিটন বলেছেন, সাম্প্রদায়িক অপপ্রচার সৃষ্টির জন্য আলাউদ্দীন আলাল মাস্টারের লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করতে দুষ্কৃতকারী চক্র হিন্দুবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে বলে ধারণা করছি। দুটি ঘটনায় দায়ের মামলায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।গত ১৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার একটি হিন্দু বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এতে ওই বাড়ির চার পরিবারের ঘর পুড়ে গেছে। ভুক্তভোগী শিশির শীল জানান, রাতে একদল দুর্বৃত্ত তাদের ঘরে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন দেয়। ঘটনার সময় বাড়ির সবাই ঘুমাচ্ছিল। পরিবারের সদস্যরা দৌড়ে ঘরের বাইরে চলে যায়। আগুনে ঘরের জিনিসপত্র ভস্মীভূত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ টাকা।২৬ নভেম্বর ভোলার চরফ্যাশনে আছলামপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতা জামাল মেম্বারের বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলা করে। তারা দুটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয়। ২৪ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর সদরে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি তোফায়েল আহামেদ ও ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য আলী করিমের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।আগের দিন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার বেতাগাঁও গ্রামে বিএনপি-জামায়াতের ১৫ নেতাকর্মীর অন্তত ১০-১২টি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরীর মেয়ে চৌধুরী সায়মা ফেরদৌসের অভিযোগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা পুলিশের সহযোগিতায় আগুন দিয়েছে।
ওইদিন বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালীতে একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ২৪ ডিসেম্বর বিকালে বাগেরহাট পৌরসভার হাড়িখালীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাসিবুল হাসানের সমর্থকদের দুটি ভাড়া করা মাইক্রোবাসে আগুন দেওয়া হয়।২২ ডিসেম্বর নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও সদর উপজেলায় বিএনপি-জামায়াতের অন্তত ৩০ নেতাকর্মীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ও বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট শেষে একটি মুরগির ফার্মে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী-৪ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মো. শাহজাহান বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করছে।২০ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গার খাদিমপুরে বিএনপি নেতা শেরেগুলের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে গোডাউনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের বিএনপি প্রার্থী শরিফুজ্জামান শরিফের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম তার লোকজন দিয়ে শেরেগুলের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।ওইদিন গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর মনোহরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদকের বাড়িতে অগ্নিসংযোগে দুটি গরু মারা যায়। দগ্ধ হয় আরও পাঁচটি গরু। ক্ষতি হয় প্রায় দুই লাখ টাকার। এর এক দিন আগে মৌলভীবাজার শহরের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগ কর্মীর একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।১৮ ডিসেম্বর খুলনা শহরের খানজাহান আলী থানা বিএনপির সভাপতি মীর কায়সেদ আলীর বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা শহরের কামিনীগঞ্জ বাজারে একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।১৬ ডিসেম্বর রাতে ফেনীর সোনাগাজীর আলামপুর গ্রামে হিন্দুবাড়ির দুটি বসতঘর ও রান্নাঘরে আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতারা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন।১৫ ডিসেম্বর রাতে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা জয়ের বাড়িতে পেট্রলবোমা হামলায় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। মোস্তফা জয়ের অভিযোগ, বিএনপি-জামায়াতের লোকজন এই অগ্নিসংযোগ করে। ওইদিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ও বিএনপি নেতা হারুন অর রশিদের বসতঘরে হামলা-ভাঙচুরসহ দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নে বিএনপি কর্মীর মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।১৩ ডিসেম্বর রাতে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরের প্রধান সড়কে উপজেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় এবং ধানের শীষ প্রার্থীর নির্বাচনী সমন্বয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে দলীয় কার্যালয়ের আসবাব ছাড়াও পাশের দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে যায়। ১৩ ডিসেম্বর নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনে বিএনপির প্রার্থী সরদার মো. সাখাওয়াত হোসেন বকুলের নির্বাচনী গণসংযোগ থেকে ফেরার পথে ১৩ মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।
গত ১১ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের ধুকুরিয়ায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জগদীশ চন্দ্র সাহার বাড়িতে দুর্বৃত্তরা গুলিবর্ষণ ও ককটেল ছোড়ে। বগুড়ার ধুনটের এলাঙ্গী ইউনিয়ন যুবদলের নেতা মুরাদ হোসেনের বসতবাড়িতে পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে একটি মোটরসাইকেল, নগদ টাকাসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে যায়।আগের দিন ?সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বিএনপির প্রার্থী এমএ মুহিতের পৌর এলাকার রামবাড়ীর (খঞ্জনদিয়া) বাড়িতে হামলা হয়। সেখানে তিনটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলায় বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন।৯ ডিসেম্বর রাতে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় বড়হাতিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রিটন বড়ুয়া রোনার বাড়িতে মুখোশধারীরা অগ্নিসংযোগ করে। ৬ ডিসেম্বর বগুড়ার ধুনটের চিকাশী ইউনিয়নের সুলতানহাট গ্রামে আওয়ামী লীগ নেতা নাহিদ হাসানের বাড়ির গোয়ালঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি গরু উদ্ধার করতে গেলে দগ্ধ হন। এ ছাড়া দুটি গরু দগ্ধ এবং একটি মারা যায়। আহত নাহিদ জানান, তার বিশ্বাস রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ গোয়ালঘরে আগুন দিয়েছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment